চাকরির বাজার

‘তোরা যে যা বলিস ভাই, আমার একটা চাকরি তাড়াতাড়ি চাই।’ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বেঁচে থাকলে হয়তো এভাবে বলতেন।
বাংলাদেশের চাকরির সুযোগ যে অনেক আছে, এমন বলা যাবে না; তবে এটাও বলা উচিত হবে না যে এখানে চাকরি নেই। একটা পদের জন্য অনেক চাকরিপ্রত্যাশী পাওয়া যাবে এখানে। বিশেষ করে যদি চাকরিটি রাজধানীতে হয়। তবে বেতন তুলনামূলকভাবে ভালো, কিন্তু কর্মস্থল ঢাকার বাইরে। এক্ষেত্রে দেখা যাবে, চাকরিপ্রত্যাশী তুলনামূলকভাবে কম। যারা আসছে তাদের নিয়োগ দিতে হয়তো চাইবে না নিয়োগকর্তারা।
সত্যি বলতে বাংলাদেশ এখন মুক্ত অর্থনীতির দেশ। তাই যে কেউ এদেশে এসে চাকরি করতে পারে। ঠিক এভাবে বাংলাদেশের কেউ চাইলেই বিদেশে গিয়ে চাকরি করতে পারে। তবে এ ক্ষেত্রে অনেক কিছু বিবেচনা করা হয়, যা শুধু বাংলাদেশের ক্ষেত্রেই। বাংলাদেশি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কর্তারা বিদেশি কর্মী নেওয়াকে বেশি পছন্দ করে। লক্ষ করলে দেখা যাবে, বাংলাদেশি একজন এফসিএমএ বা এফসিএ যে পরিমাণ অর্থ প্রত্যাশা করে তা বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠান দিতে চায় না বা পারে না। অন্যদিকে সেই স্থানগুলো দখল করে নেয় তাদের চেয়ে কম অভিজ্ঞ বিদেশি কর্মী।
উৎপাদনশীল ও ত্যাগী মনোভাব ছাড়া চাকরির বাজার বড় করা সম্ভব নয়। উন্নত বিশ্বে লক্ষ করলে দেখা যাবে, অনেকে চাকরিজীবন ত্যাগ করে নিজের প্রতিষ্ঠান চালু করেছে। ধরা যাক খান একাডেমির সালমান খানের কথা। তিনি লোভনীয় বেতনের চাকরি ছেড়ে নিজের প্রতিষ্ঠান চালু করেন। কিন্তু বাংলাদেশের দিকে তাকালে দেখা যাবে সরকারি-বেসরকারি প্রায় সব প্রতিষ্ঠান বেকার যুবকদের উদ্যোক্তা হতে বলছে, কিন্তু তাদের কোনো অভিজ্ঞতা নেই। অন্যদিকে যারা অভিজ্ঞ তারা সারা জীবন কি অভিজ্ঞতা নিয়েই চলবেন? তাদের কি নতুন কিছু করতে ইচ্ছা করে না? শুরু হোক অভিজ্ঞদের দিয়ে, তারপর না হয় অভিজ্ঞতাহীনরা সাহস করবে।
বাংলাদেশের ব্যাংক ব্যবস্থা উন্নত দেশের তুলনায় অনেক ক্ষেত্রে বেশ এগিয়ে আছে। কিন্তু একটু গভীরভাবে লক্ষ করলে দেখা যাবে এটা আসলে ধনীর জন্য তৈরি করা। কোনো যুবক যদি এসএমই লোন নিতে চায়, তবে তার কমপক্ষে তিন বছরের ব্যবসা করার অভিজ্ঞতা থাকতে হবে। কিছু ব্যবসার ক্ষেত্রে এ শর্ত মেনে নেওয়া যায়, সব ব্যবসার জন্য তিন বছর অনেক বেশি সময়। কেউ যদি নিজের পুঁজিতে ব্যবসা করে তিন বছর চালিয়ে নিয়ে আসতে পারে, তবে তার ঋণ নেওয়ার প্রয়োজন আছে কি?
বাংলাদেশের সামাজিক জীবন ব্যবস্থার আলোকে বিবেচনা করলে দেখা যায়, আমরা অনেক কিছুই অন্যদের দেখে চলি। এমন মনোভাব থাকা উচিত নয়, কারণ আমাদের সামাজিক ব্যবস্থা তাদের সঙ্গে কখনও মিলবে না। একটা উদাহরণ দিয়ে বোঝালে হয়তো সুবিধা হবে। ধরুন আপনি ঢাকার কোনো এক এলাকা ঘুরে এলেন। এবার নিজের গ্রামে গিয়ে কি সেই একই মাটি দেখবেন? কখনও এক হবে না। তবে আপনি কীভাবে আশা করেন অন্য এক দেশের সমাজব্যবস্থা আমাদের সঙ্গে মিলে যাবে?

ইয়াসিন হোসেন রাকিব

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০