অ্যাকশনএইডের সেমিনারে বক্তারা মিয়ানমারের বিরুদ্ধে আইসিসিকে তথ্য দেওয়ার পরামর্শ

নিজস্ব প্রতিবেদক : মিয়ানমার রোহিঙ্গাদের ওপর যে নিপীড়ন ও হত্যাযজ্ঞ চালিয়েছে তার তদন্ত ও বিচার আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের (আইসিসি) মাধ্যমে করা সম্ভব। সেক্ষেত্রে আগামী ১১ জুনের মধ্যে বাংলাদেশের কাছে আইসিসি যে তথ্য চেয়েছে তা দেওয়া উচিত, যার মাধ্যমে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন ও গণহত্যার বিষয়ে মিয়ানমারকে জবাবদিহির মুখে আনা সম্ভব।
গতকাল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট ভবনে ‘আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত ও রোহিঙ্গা সংকট’ শীর্ষক একটি আন্তর্জাতিক সেমিনারে দেশি ও আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞরা এসব কথা বলেন।
প্রসঙ্গত, গত ৯ এপ্রিল মিয়ানমার থেকে রোহিঙ্গাদের বিতাড়নের বিষয়টি তদন্ত করার এখতিয়ার আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের আছে কি না, তা জানতে চেয়েছিলেন ওই আদালতের এক কৌঁসুলি ফাতু বেনসুদা। এতে বলা হয়, যদিও মায়ানমার রোম চুক্তি সই করেনি, তথাপি এ পরিস্থিতির একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক ‘জোরপূর্বক আন্তর্জাতিক সীমানায় প্রবেশ করানো’, যা ঘটেছে বাংলাদেশের সীমান্তে। ১১ এপ্রিল প্রি-ট্রায়াল চেম্বার এ যুক্তির পক্ষে মত প্রদান করে। পরে ৭ মে আইসিসির প্রি-ট্রায়াল চেম্বার ‘যে পরিস্থিতিতে বিপুল সংখ্যক রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী মিয়ানমার ছেড়ে বাংলাদেশের সীমানায় আশ্রয় নিয়েছে’ সে বিষয়ে আইসিসি তার এখতিয়ার চর্চা করবে কি না, সে সম্পর্কে বাংলাদেশকে তিনটি বিষয়ে পর্যবেক্ষণ জমা দেওয়ার আহŸান জানায়। বাংলাদেশ তার জবাব দেওয়ার জন্য ১১ জুন পর্যন্ত সময় পাবে। আগামী ২০ জুন শুনানির দিন ধার্য করেছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত।
এ বিষয়েই অ্যাকশনএইড বাংলাদেশ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সেন্টার ফর জেনোসাইড স্টাডিজ ও ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের সেন্টার ফর পিস অ্যান্ড জাস্টিস যৌথভাবে এ আন্তর্জাতিক সেমিনারের আয়োজন করে।
সেমিনারে আইসিসির উদ্যোগ ও বাংলাদেশের করণীয় নিয়ে বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদ বলেন, আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত বাংলাদেশের কাছে যে তথ্য ও প্রমাণ চেয়েছে সেগুলো দেওয়া উচিত। আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের মূল ভিত্তি ‘রোম বিধি’ অনুযায়ী আইসিসি চাইলে মিয়ানমার যে নিপীড়ন ও হত্যাযজ্ঞ চালিয়েছে তার তদন্ত করতে পারে, কারণ অনেক মানুষ হত্যা করা হয়েছে। সাত লাখেরও বেশি মানুষ দেশ ছাড়তে বাধ্য হয়েছে, যার মধ্যে অর্ধেক শিশু।
তিনি আরও বলেন, যে মানবতাবিরোধী অপরাধগুলো ঘটেছে তা আমলে নিয়ে আইসিসি চাইলে তার বিচারিক ক্ষমতা প্রয়োগ করতে পারে, কারণ এই অপরাধের যথেষ্ট তথ্য-প্রমাণ আছে। আর বাংলাদেশ স্টেট পার্টি হিসেবে এখানে ভ‚মিকা পালন করতে পারে।
বক্তারা বলেন, মে মাসে ৪০০ রোহিঙ্গা নারীর পক্ষে তাদের স্বাক্ষরিত একটি আবেদনপত্র নেদারল্যান্ডসের হেগে অবস্থিত আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে জমা দেন আইনজীবীরা। ওই আইনজীবীরা মনে করেন, ক্ষতিগ্রস্তদের ন্যায়বিচারের জন্য আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতই একমাত্র ভরসা।
এ বিষয়ে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের সাবেক প্রসিকিউটর কেট ভিগনেসওয়ারেন বলেন, হত্যা ও নিপীড়নের পর মানুষ বাংলাদেশে আসতে বাধ্য হয়েছে। তাই এক্ষেত্রে আইসিসি ভৌগোলিক বিচারিক ক্ষমতা প্রয়োগ করতে পারে। রোম বিধি ধারা-১২ অনুযায়ী মিয়ানমারকে বিচারের আওতায় আনা সম্ভব। এছাড়া যেহেতু মিয়ানমার হত্যা ও ধর্ষণের মতো মানবতাবিরোধী অপরাধের সঙ্গে জড়িত, তাই তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া সম্ভব।
অস্ট্রেলিয়ার সাবেক অ্যাটর্নি জেনারেল ফিলিপ রুডক বলেন, গণহত্যা বলার মতো যথেষ্ট তথ্য ও প্রমাণ আছে। তাই মিয়ানমারের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতেই হবে। এজন্য জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদসহ সবার একসঙ্গে কাজ করা খুবই জরুরি, কারণ নিরাপত্তা পরিষদ চাইলে এ বিষয়ে সরাসরি হস্তক্ষেপ করতে পারে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক ড. ইমতিয়াজ আহমেদ বলেন, রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে আইনি উদ্যোগ নেওয়া খুবই জরুরি। গণহত্যার বিচার কিংবা রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিতে মিায়নমারকে জবাবদিহিতার আওতায় আনতেই হবে। এক্ষেত্রে আইসিসি বড় ভ‚মিকা রাখতে পারে। একই সঙ্গে মিয়ানমারের ওপর রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক চাপ তৈরি করতে হবে। আর এটা করা সম্ভব, কারণ রোহিঙ্গাদের ওপর মিয়ানমার যে হত্যা, ধর্ষণ, নিপীড়ন করেছে, তার যথেষ্ট প্রমাণ আছে। সেজন্য শুধু দ্বিপক্ষীয় আলোচনায় এর সমাধান সম্ভব নয়। বহুপক্ষীয় চাপের মাধ্যমে এই সমস্যার সমাধান করতে হবে। রাশিয়াকেও এক্ষেত্রে আমাদের সঙ্গে নিতে হবে।
আলোচনার সমাপনী বক্তব্যে অ্যাকশনএইড বাংলাদেশের কান্ট্রি ডিরেক্টর ফারাহ্ কবির বলেন, মিয়ানমারকে যতক্ষণ পর্যন্ত আইনি বাধ্যবাধকতায় আওতায় আনা না যায়, ততক্ষণ তারা বিতাড়িত রোহিঙ্গাদের ফেরত নেবে না। সে কারণে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত ও জাতিসংঘকে উদ্যোগী হয়ে মিয়ানমারকে বিচারের আওতায় আনতে হবে। বাংলাদেশ যেহেতু আইসিসির সদস্য, সেক্ষেত্রে তদন্ত ও বিচারকাজে আমরা বিশেষ ভ‚মিকা রাখতে পারি। এজন্য বাংলাদেশ সরকারের উচিত আইসিসির চাওয়া তিনটি বিষয়ে তথ্য-প্রমাণ দেওয়া।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০