তৈজসপত্র বা বাসনকোসনের চাহিদা চিরন্তন। থালা, বাটি, গ্লাস, গামলা, চামচ, জগ, মগ, কাপ, পিরিচ প্রভৃতি ছাড়া এক দিনও চলে না আমাদের জীবন। একসময় মাটির তৈরি তৈজসপত্রের চল ছিল। এখনও আছে সীমিত আকারে। এরপর কাঁসা, পিতল, চীনামাটি, অ্যালুমিনিয়াম, প্লাস্টিক, ইস্পাত, কাচ প্রভৃতির তৈরি তৈজসপত্রের ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়ি আমরা। তৈজসপত্রের জগতে সর্বশেষ সংস্করণ বলা যায় মেলামাইনকে। প্রয়োজনের তাগিদ কিংবা আভিজাত্য ফুটিয়ে তুলতে আমরা বর্তমানে মেলামাইনের তৈরি তৈজসপত্র ব্যবহার করছি।
দেশকালভেদে এ চিত্র সব স্থানের। বাংলাদেশ এর ব্যতিক্রম নয়। আশির দশকের মাঝামাঝিতে দেশে এ শিল্পের যাত্রা শুরু হয়। এখানে উচ্চবিত্ত কিংবা নি¤œবিত্তের কথাই বলুনÑসবার পছন্দ মেলামাইনের তৈরি সামগ্রী। নতুন নকশা ও টেকসই কাঠামোর পাশাপাশি সাশ্রয়ী দামের কারণে সব শ্রেণির ভোক্তার কাছে পছন্দের মেলামাইনসামগ্রী। শুধু তা-ই নয়, সব সময় ব্যবহারের সুবিধা নিশ্চিত করে মেলামাইনের তৈরি পণ্য। দিন দিন এর চাহিদা ও বাজার বাড়ছে। অনেক প্রতিষ্ঠান রফতানিও করে তাদের উৎপাদিত পণ্য। এ অবস্থান তৈরির পেছনে শরীফ মেলামাইনের ভূমিকা রয়েছে।
বাংলাদেশের শীর্ষস্থানীয় মেলামাইন তৈজসপত্রের উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান শরীফ মেলামাইন। ১৯৮৬ সালে এর পথচলা শুরু হয় ব্যবসায়ী মো. রজ্জব শরীফের হাত ধরে।
শরীফ মেলামাইনের বর্তমান চেয়্যারম্যান মো. রজ্জব শরীফ। ব্যবস্থাপনা টিমের নেতৃত্ব দিচ্ছেন তিনিই। একই সঙ্গে শরীফ ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেড ও শরীফ হাউজিং কোম্পানি লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক তিনি। সোনার বাংলা ইন্স্যুরেন্স লিমিটেডের পরিচালনা পর্ষদে রয়েছেন। তার কর্মদক্ষতা, অধ্যবসায় ও পরিশ্রমের ফসল এ প্রতিষ্ঠান। তার কার্যকর দিকনির্দেশনা ও সিদ্ধান্ত প্রতিষ্ঠানটির উন্নতির ক্ষেত্রে ভূমিকা রেখেছে। প্রশিক্ষিত জনবলসহ পরিবেশবান্ধব প্রতিষ্ঠান গড়ার ওপর গুরুত্ব দিয়েছেন তিনি।
শরীফ মেলামাইনে কর্মরত রয়েছে প্রায় তিন হাজার কর্মী। কর্মিবান্ধব হিসেবে সুনাম রয়েছে প্রতিষ্ঠানটির। সুদক্ষ ও অভিজ্ঞ কর্মীদের সমন্বয়ে গঠন করা হয়েছে শরীফ মেলামাইনের কর্মিবাহিনী। এখানে তথ্যপ্রযুক্তির সর্বোত্তম ব্যবহার করা হয়। কর্মস্থলে দুর্ঘটনার জন্য নানা ধরনের পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। ঝুঁকি এড়াতে নানা নিয়ম মেনে চলা হয় প্রতিষ্ঠানটিতে। শরীফ মেলামাইন সব সময় এর কর্মীদের প্রাপ্য বুঝিয়ে দিতে তৎপর। বেতনভাতা প্রদানে কখনও বিলম্ব হয় না। কর্মপরিবেশ নিয়ে কর্মীরা সন্তুষ্ট।
শরীফ মেলামাইনের পণ্য মজবুত, সহজে ভাঙে না। পণ্যে কোনো গন্ধ নেই। রং দীর্ঘস্থায়ী। সব পণ্যের ফিনিশিং চমৎকার। গৃহস্থালির পাশাপাশি করপোরেট প্রতিষ্ঠানের জন্য মেলামাইন পণ্য উৎপাদন করে শরীফ মেলামাইন। করপোরেট প্রতিষ্ঠানের চাহিদা বিবেচনায় নানা ধরণের পণ্য তৈরি ও বিপণন করে থাকে প্রতিষ্ঠানটি। এখানে শিশুদের জন্য রয়েছে ‘অ্যাংরি বার্ডস’, ‘প্রিন্সেস’, ‘টম অ্যান্ড জেরি’ চরিত্রের ছবিযুক্ত বিশেষ প্লেট। কার্টুন চরিত্র মীনার ছবিযুক্ত মগ পাওয়া যায় এই প্রতিষ্ঠানে। শরীফ মেলামাইনের পণ্যের বেলায় বিশেষভাবে উল্লেখ করতে হয় এর সিংহ মার্কার কথা। সিংহ মার্কা হলোগ্রামে নানা রং ও মনকাড়া নকশার সঙ্গে পরিচিত দেশের অসংখ্য ভোক্তা। এভাবে দেশ ও অর্থনীতির কল্যাণে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখছে শরীফ মেলামাইন।
অভ্যন্তরীণ চাহিদা পূরণের পর বিশ্বের বিভিন্ন দেশে রফতানি হয় শরীফ মেলামাইনের পণ্য। এসব দেশের তালিকায় রয়েছে যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া, অস্ট্রেলিয়া, নরওয়ে, সুইডেন, ফিনল্যান্ড, কাজাখস্তান, সৌদি আরব, কাতার, ওমান, সংযুক্ত আরব আমিরাত, ভারত, ভুটান প্রভৃতি।
প্রতিষ্ঠানটির সূত্রমতে, নামেই চলে শরীফ মেলামাইন। সুন্দর ও নান্দনিক হওয়ায় ক্রেতাদের কাছে জনপ্রিয় তাদের সব পণ্য। ক্রেতাদের আস্থা তৈরি করে নিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। গুণগত মান ও স্বকীয়তার ওপর ভর করে টিকে আছে শরীফ মেলামাইন। পণ্যের প্রচারণায় আধুনিক বিপণন কৌশল অবলম্বন করে চলেছে প্রতিষ্ঠানটি। দেশের বাইরের বাজার ধরে রাখার পাশাপাশি নতুন রফতানি বাজার ধরতে নিরলস কাজ করে যাচ্ছে। প্রতিবছর দেশের আন্তর্জাতিক বাণিজ্যমেলায় অংশ নিয়ে পণ্যের প্রচারণাও চালিয়ে থাকে এই প্রতিষ্ঠানটি।
রতন কুমার দাস