রোহিঙ্গাদের কারণে সামাজিক পরিবেশের ক্ষতি হচ্ছে

শেয়ার বিজ ডেস্ক: ‘মানবিক কারণে রোহিঙ্গাদের জায়গা দেওয়া হলেও এখন আর তাদের হাতে হওয়া পরিবেশের ক্ষতি মেনে নেওয়া যাচ্ছে না’ বলে মন্তব্য করেছেন কলামিস্ট সৈয়দ আবুল মকসুদ। গতকাল রাজধানীর পুরানা পল্টনের মুক্তি ভবনে বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) ও গ্রিন ভয়েসের যৌথ উদ্যোগে বিশ্ব পরিবেশ দিবস উপলক্ষে ‘বাংলাদেশে রোহিঙ্গা বসতি: কক্সবাজারের পরিবেশ সংকট’ শীর্ষক এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন।
সৈয়দ আবুল মকসুদ বলেন, ‘দ্রুত পরিবেশ বাঁচাতে সরকারকে উদ্যোগ নিতে হবে। রোহিঙ্গাদের কারণে শুধু পরিবেশ নয়, সামাজিক, অর্থনৈতিক, সাংস্কৃতিক ক্ষতিও হচ্ছে। এ সমস্যার সমাধানে একটি সমন্বিত উদ্যোগ নিতে হবে।’
মূল প্রবন্ধে ফজলুল কাদের বলেন, ‘রোহিঙ্গাদের কারণে কক্সবাজারে পরিবেশ প্রতিবেশ সংকট এখন চরমে। ২০১৭ মাসের ২৮ আগস্ট থেকে এই বছরের ৩০ মে পর্যন্ত রোহিঙ্গা বসতির জন্য কক্সবাজারের প্রায় সাড়ে চার হাজার একর সংরক্ষিত বন উজাড় হয়ে গেছে। এর আর্থিক মূল্য প্রায় ৫০০ কোটি টাকা। এভাবে চলতে থাকলে পর্যটন নগরী কক্সবাজার বসবাসের অযোগ্য হয়ে পড়বে। এ জন্য দ্রুত রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন জরুরি।’
বন বিভাগের উদ্ধৃতি দিয়ে তিনি আরও বলেন, ‘রোহিঙ্গাদের বসতি গড়ে তুলতে গত ১৯ অক্টোবর পর্যন্ত বন বিভাগের উখিয়া, টেকনাফ ও হোয়াইকং রেঞ্জের এক হাজার ৬৪৫ একর সামাজিক বনাঞ্চলে গাছ কেটে ফেলেছে। ধ্বংস করা এই বনের আর্থিক মূল্য প্রায় ১৫১ কোটি টাকা। এ তিন রেঞ্জে বর্তমানে পাঁচ লাখ ২২ হাজার রোহিঙ্গা বসবাস করছে। ঝুঁকির মধ্যে আছে ওই এলাকার এক হাজার ১৫৬ প্রজাতির উদ্ভিদ ও প্রাণী। এর মধ্যে হাতি ও দুই প্রজাতির বিড়াল সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে আছে। রোহিঙ্গাদের কারণে ওই এলাকার পানির স্তর নিচে নেমে যাচ্ছে। সুপেয় পানি কমে যাচ্ছে। লবণাক্ততা বাড়ছে। আগামী পাঁচ বছর এই পানির স্তর আরও নিচে নামবে।’
বাপার সাধারণ সম্পাদক ডা. মো. আবদুল মতিন বলেন, ‘এভাবে চললে কক্সবাজার বসবাসের অযোগ্য হয়ে পড়বে। মরুকরণ শুরু হবে। এ অবস্থা থেকে পরিত্রাণ পেতে হলে রোহিঙ্গাদের দ্রুত প্রত্যাবাসন জরুরি। পরিবেশ রক্ষায় সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ে বাস্তবসম্মত কমসূচি গ্রহণ করতে হবে। ভূগর্ভস্থ পানির বদলে বিকল্প পানির ব্যবস্থা করতে হবে। পাহাড়, বন, খাল কঠোরভাবে সংরক্ষণের পদেক্ষেপ নিতে হবে। পরিবেশ আইন বাস্তবায়ন করতে হবে।’
স্ট্যামফোর্ড ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক ড. আহম্মেদ কামরুজ্জামান মজুমদার বলেন, ‘রোহিঙ্গা সমস্যার সমাধানে দ্রুত সরকারকে উদ্যোগ নিতে হবে। এ জন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীদের কড়া নজরদারি, ত্রাণের পাশাপাশি স্বাস্থ্যকর্মী নিয়োগ ও শিক্ষা, চিকিৎসা নিশ্চিত করা, ক্ষতিগ্রস্ত বনাঞ্চলে আবার বনায়ন করা, বনের বাইরে রোহিঙ্গাদের অন্য জায়গায় আশ্রয় দেওয়ার ব্যবস্থা করা দরকার। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় ও সংগঠনের সহায়তায় রোহিঙ্গাদের মিয়ানমার ফেরত পাঠানো বা তৃতীয় কোনো দেশে পাঠানোর চেষ্টা করার পাশাপাশি রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠাতে সরকারকে আন্তর্জাতিক ও স্থানীয়ভাবে চাপ সৃষ্টি করতে হবে।’

 

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০