পলাশ শরিফ: চলতি বছরের প্রথম প্রান্তিকে আগের বছরের চেয়ে পিছিয়েছে সাউথইস্ট ব্যাংক। এক বছরে ব্যাংকটির পরিচালন আয় ১৩ শতাংশের বেশি বেড়েছে। তবে আয় বাড়লেও বাড়তি প্রভিশনের চাপে পিছিয়েছে বেসরকারি ব্যাংকটি। এ সময়ে কর-পরবর্তী মুনাফা প্রায় সাড়ে ২৮ শতাংশ কমেছে। শুধু ওই প্রান্তিকেই নয়, অনাদায়ী, শ্রেণিকৃত ও খেলাপি ঋণ বৃদ্ধি ও প্রভিশনের চাপে ২০১৫ সাল থেকে ব্যাংকটির মুনাফা ধারাবাহিকভাবে কমছে।
অনিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদনের তথ্যমতে, চলতি আর্থিক বছরের জানুয়ারি থেকে মার্চ পর্যন্ত প্রথম প্রান্তিকে প্রায় ১২০ কোটি ২৩ লাখ টাকা সুদ আয় করেছে সাউথইস্ট ব্যাংক। এক বছরে এ আয় প্রায় ৩৭ কোটি টাকা বেড়েছে। একইভাবে বিনিয়োগ আয়, কমিশন, এক্সচেঞ্জ ও ব্রোকারেজ আয়সহ অন্য আয়ও বেড়েছে। এ কারণে ব্যাংকটি পরিচালন মুনাফা এর আগের বছরের তুলনায় ১৩ শতাংশের বেশি বা প্রায় ৪২ কোটি ৪১ লাখ টাকা বেড়ে প্রায় ৩৬০ কোটিতে দাঁড়িয়েছে।
আয় বাড়লেও চলতি বছরের শুরুতে সাউথইস্ট ব্যাংকের কর-পরবর্তী মুনাফা প্রায় ৬২ কোটি ৬১ লাখ টাকায় দাঁড়িয়েছে, যা এর আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় সাড়ে ২৮ শতাংশ কম।
মুনাফা কমার কারণ সম্পর্কে ব্যাংকটির ভারপ্রাপ্ত প্রধান অর্থ কর্মকর্তা (সিএফও) রাশেদুল ইসলাম শেয়ার বিজকে বলেন, ‘এখন আগের চেয়ে প্রায় সব আয়-ই বেড়েছে। এ কারণে পরিচালন মুনাফাও বেড়েছে। তবে খেলাপি ঋণ ও পুঁজিবাজারে বিনিয়োগের বিপরীতে প্রভিশন বেড়ে গেছে। পুঁজিবাজারে দরপতনের কারণে হাতে থাকা কিছু শেয়ারের বাজার মূল্য ক্রয়মূল্যের নিচে নেমেছে। এর বিপরীতে বাড়তি প্রভিশন রাখতে হয়েছে। শ্রেণিকৃত ঋণ ও বিনিয়োগের বিপরীতে বাড়তি প্রভিশনের কারণে এবার মুনাফা কম হয়েছে।’
প্রাপ্ত তথ্যমতে, প্রথম প্রান্তিকে শ্রেণিকৃত-খেলাপি ঋণ ও বিনিয়োগের বিপরীতে সাউথইস্ট ব্যাংক মোট প্রভিশন প্রায় ১০৫ কোটি ৫১ লাখ টাকায় দাঁড়িয়েছে, যা এর আগের আর্থিক বছরের প্রথম প্রান্তিকে ছিল প্রায় ৫২ কোটি ৭৯ লাখ টাকা। সেই হিসাবে এক বছরের ব্যবধানে মোট প্রভিশন ৯৯ দশমিক ৮৬ শতাংশ বেড়েছে। টাকার অঙ্কে যার পরিমাণ প্রায় পৌনে ৫২ কোটি টাকা। এ সময়ে শ্রেণিকৃত-খেলাপি ঋণের বিপরীতে ব্যাংকটির প্রভিশন প্রায় সাড়ে ৩৮ শতাংশ কমেছে। অন্যদিকে পুঁজিবাজারে বিনিয়োগের বিপরীতে সাউথইস্ট ব্যাংকের প্রভিশন প্রায় ৫০ কোটি টাকা ছাড়িয়েছে। মূলত ব্যাংকটির হাতে থাকা শেয়ারের দরপতনের কারণে এ বছর প্রভিশন উল্লেখযোগ্য হারে বেড়েছে।
এদিকে এর আগে ২০১৭ সাল শেষে সাউথইস্ট ব্যাংকের শেয়ারপ্রতি আয় (ইপিএস) দাঁড়িয়েছে এক টাকা ২৭ পয়সা, যা এর আগের সমাপ্ত আর্থিক বছর শেষে দুই টাকা ৬৬ পয়সা ছিল। সেই হিসাবে এক বছরে ব্যাংকটির ইপিএস প্রায় সাড়ে ৫২ শতাংশ বা এক টাকা ৩৯ পয়সা কমেছে। তবে ব্যাংকটি সমাপ্ত বছরের নিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদন এখনও প্রকাশ করেনি।
তবে সাউথইস্ট ব্যাংকের মুনাফা কমা নতুন নয়। ২০১৫ সাল থেকে ব্যাংকটির মুনাফা একটানা কমছে। এর আগে ২০১৪ সালে পাঁচ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ (প্রায় ৩৮৩ কোটি ৭২ লাখ টাকা) কর-পরবর্তী মুনাফা করেছিল সাউথইস্ট ব্যাংক; যা এরপরের বছরে প্রায় পৌনে ৭৬ কোটি টাকা কমে প্রায় ৩০৭ কোটিতে নেমেছিল। আর ২০১৬ সালে এ মুনাফা আরও প্রায় সাড়ে ৬৩ কোটি কমেছে। পরিচালন আয় বাড়লেও মুনাফা কমার ধারা সর্বশেষ আর্থিক বছরেও দৃশ্যমান ছিল।
উল্লেখ্য, ২০০০ সালে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত সাউথইস্ট ব্যাংকের পরিশোধিত মূলধন প্রায় ৯১৭ কোটিতে দাঁড়িয়েছে। আর ব্যাংকটির মোট শেয়ারের ৩২ দশমিক ৩৪ শতাংশ উদ্যোক্তা ও পরিচালকদের হাতে রয়েছে। বাকি শেয়ারের মধ্যে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের হাতে ২৯ দশমিক ৯৬ শতাংশ, বিদেশি বিনিয়োগকারীদের হাতে ছয় দশমিক ৮০ শতাংশ ও সাধারণ বিনিয়োগকারীদের হাতে ৩০ দশমিক ৯০ শতাংশ শেয়ার রয়েছে। গত পাঁচ বছরের মধ্যে ২০১৩ সালে বোনাস ও নগদ মিলিয়ে সর্বোচ্চ ২১ শতাংশ লভ্যাংশ দিয়েছে। মুনাফা কমায় সর্বশেষ নগদ লভ্যাংশ ১৫ শতাংশে নেমেছে।
খেলাপি ঋণ-প্রভিশনে পিছিয়ে পড়েছে সাউথইস্ট ব্যাংক
