মিল্ক ভিটা দাম বাড়ছে ভোক্তা পর্যায়ে: কমছে খামারিদের

 

নাজমুল হুসাইন: ভোক্তা পর্যায়ে মিল্ক ভিটার দাম বাড়িয়ে কমানো হয়েছে প্রান্তিক খামারি পর্যায়ে। চলতি মাসে প্রতি লিটার দুধের দাম তিন টাকা বাড়লেও সে সুফল পাননি প্রান্তিক খামারিরা। উল্টো তাদের কাছ থেকে সংগৃহীত দুধের দাম কমানো হয়েছে প্রতি লিটারে এক টাকা। এতে মিল্ক ভিটায় সুবিধাবঞ্চিত হচ্ছেন খামারিরা। যদিও দাম বাড়ানোর ক্ষেত্রে সব সময় খামারি পর্যায়ে দাম বাড়ানোর অজুহাত দেখায় প্রতিষ্ঠানটি।

দেশের প্রান্তিক খামারিদের উন্নয়নেই মিল্ক ভিটা প্রতিষ্ঠিত হয়। দফায় দফায় ভোক্তা পর্যায়ে দাম বাড়ানোয় প্রান্তিক খামারিদের দুধ বর্তমানে বাজারে বিক্রি হচ্ছে প্রায় দ্বিগুণ দামে। অপরদিকে রাজধানীর বাজারে সর্বোচ্চ সরবরাহকারী হওয়ায় এর প্রভাব পড়ে সামগ্রিক বাজারে। অন্যান্য কোম্পানিও মিল্ক ভিটার কারণে কম দামে দুধ সংগ্রহ করে বেশি দামে বিক্রির সুযোগ পাচ্ছে।

উল্লেখ্য, বাজারে এখন প্রতি লিটার মিল্ক ভিটার উৎপাদিত তরল দুধের দাম ৬৫ টাকা ও আধালিটার ৩৫ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। গত ডিসেম্বরে এর দাম ছিল যথাক্রমে ৬২ টাকা ও ৩৪ টাকা। অপরদিকে চলতি মাসের ১৭ তারিখ থেকে খামারি পর্যায়ে প্রতি লিটার দুধে দাম ননিভেদে এক টাকা দাম কমানো হয়েছে। এতে বর্তমানে স্ট্যান্ডার্ড ননিযুক্ত (ফ্যাট) দুধ মাত্র ৩৪ টাকা ৭০ পয়সায় সংগ্রহ করছে কোম্পানিটি। এ অবস্থায় মিল্ক ভিটার মুনাফা বেড়েই চলেছে। শেষ দাম বৃদ্ধিতেই লিটারে মুনাফা বেড়েছে চার টাকা।

শীত এলেই দেশে দুধের উৎপাদন ও চাহিদা বাড়ে। সে সময় প্রতি বছরই দুধের দাম বাড়ায় কোম্পানিটি। আর কমে যায় খামারি পর্যায়ের দাম। এবারও তার ব্যতিক্রম হয়নি। এবার ভোক্তা পর্যায়ে দুধের দাম বাড়ানো আর খামারি পর্যায়ে কমানোর বিষয়ে মিল্ক ভিটার পর্যাপ্ত যুক্তি নেই। যদিও এবার দাম বাড়ানোর পর প্রতিষ্ঠানটির কর্তৃপক্ষ প্রান্তিক খামারিদের বাড়তি দাম দেওয়ার কথা বলেছে। কিন্তু সরেজমিনে এর সত্যতা পাওয়া যায়নি।

এসব বিষয় নিয়ে মিল্ক ভিটার চেয়ারম্যান শেখ নাদির হোসেন লিপু শেয়ার বিজকে বলেন, ‘এবার ব্যবস্থাপনা কমিটির সিদ্ধান্তে নয়, মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্তে দাম বাড়ানো হয়েছিল। আর খামারি পর্যায়ে এই ভরা মৌসুমে বিগত ৪০ বছর ধরেই দাম কমিয়ে আসছে মিল্ক ভিটা। এ সময় প্রচুর দুধ উৎপাদন হয়। দাম কমলেও খামারিরা তেমন প্রভাবিত হন না। আর এই দাম কমানো সাময়িক।’

আলাপকালে ভোক্তা পর্যায়ে দাম বাড়ানোর আরেক যুক্তি দেখিয়ে তিনি বলেন, ‘দাম বাড়ানোর আগে মিল্ক ভিটার বিক্রেতাদের সঙ্গে একটি বৈঠক হয়। সেখানে তারা প্রতি লিটার দুধের দাম ৬২ টাকা ও আধালিটারের দাম ৩৪ টাকা হওয়ায় আপত্তি জানান। কারণ ক্রেতাদের খুচরো টাকা দিতে সমস্যা হয় বলে জানান বিক্রেতারা। ফলে তারাই এই নতুন দাম প্রস্তাব করেন।’

দাম বাড়ানোর সুফল তাহলে কে পাচ্ছে: এমন প্রশ্নে নাদির হোসেন লিপু বলেন, ‘সারা দেশের ডিলার ও বিক্রেতার আপত্তি থাকলে আমরা বিপদে পড়বো। এ কারণে দাম বাড়িয়ে দোকানিদের প্রতি লিটারে দেড় টাকা ও ডিলারদের ৫০ পয়সা আগের চেয়ে বেশি দেওয়া হচ্ছে।’

খামারি পর্যায়ে দুধের দাম কম দেওয়ার প্রবণতা নতুন নয়। দাম না পেয়ে সড়ক অবরোধ, রাস্তায় দুধ ঢেলে প্রতিবাদসহ দুধ দেওয়া বন্ধের ঘটনাও ঘটছে অহরহ। কয়েকবার এসব সমস্যা সমাধানে সরকারকেও হস্তক্ষেপ করতে হয়েছে। মুনাফা বাড়াতে খামারিদের যথার্থ দাম দিচ্ছে না মিল্ক ভিটা কর্তৃপক্ষ।

মিল্ক ভিটা বাঘাবাড়ী সংগ্রহকেন্দ্রের অন্যতম সরবরাহকারী সমিতি পোতাজিয়া প্রাথমিক দুগ্ধ উৎপাদনকারী সমবায় সমিতির চেয়ারম্যান শহীদ আলী বলেন, ‘ভরা মৌসুমে দুধ সরবরাহ বাড়লেই দাম কমায় মিল্ক ভিটা। এতে খামারিরা বিপাকে পড়েন। মিল্ক ভিটার কারণে সব কোম্পানি দাম কমিয়ে দেয়। এবার এই মাসেই লিটারে এক টাকা দাম কমিয়েছে মিল্ক ভিটা। এখন আরও এক টাকা কমানোর কথা বলা হচ্ছে।’

তিনি বলেন, ‘আমাদের দুধই শহরে নিয়ে দ্বিগুণ দামে বিক্রি হচ্ছে। এর সুবিধা আমরা পাই না। উল্টো দুধের দাম না পেয়ে পথে বসেছি। আমাদের জন্য প্রতিষ্ঠিত প্রতিষ্ঠানই আমাদের বঞ্চিত করছে।’

এদিকে সূত্র অভিযোগ করে বলছে, সরকারি-বেসরকারি সব দুধের দাম বাড়ানোর এ প্রক্রিয়ায় সহযোগী হলো মিল্ক ভিটা। তাদের যোগসাজশেই সবাই দাম বাড়াতে পারে। এ ক্ষেত্রে অভিযোগকারীদের আঙুল মিল্ক ভিটার ব্যবস্থাপনা কমিটির দিকে।

অপরদিকে দুগ্ধ উৎপাদনকারী সমবায়ী প্রতিষ্ঠানগুলো বলছে, মিল্ক ভিটা খামারিদের কাছ থেকে চার দশমিক শূন্য স্ট্যান্ডার্ড ননিযুক্ত তরল দুধ বোনাসসহ ৩৬ টাকায় কিনে সেই দুধ থেকে ননি বের করে নেওয়া হয়। পরে তিন দশমিক ৫০ স্ট্যান্ডার্ড ননিযুক্ত তরল দুধ প্যাকেটজাত করে সরবরাহকারীদের ৫৮ টাকা দরে বিক্রি করছে। যা ভোক্তা পর্যায়ে বিক্রি হচ্ছে ৬৫ টাকায়। এতে এখন প্রতি লিটার দুধে লাভ হচ্ছে ২২ টাকারও বেশি।

১৯৭৩ সালে দেশের পাঁচটি অঞ্চলকে মিল্ক ভিটা দুধ উৎপাদনের জন্য নির্বাচন করা হয়েছিল। এগুলো হলো: টেকেরহাট, সিরাজগঞ্জ, টাঙ্গাইল, মানিকগঞ্জ ও ঢাকা ডেইরি। বর্তমানে মিল্ক ভিটা উৎপাদনকারী সমবায়ীর সংখ্যা দুই হাজার ৪০০টি। আর এসব সমবায়ের সঙ্গে যুক্ত আছেন এক লাখ ২৪ হাজার মানুষ।

মিল্ক ভিটা নিজস্ব সমবায়ীগুলোর মাধ্যমে খামারিদের দুধ সংগ্রহ করে। সাতটি বিভাগের ২৮টি জেলায় ৪২টি দুধ শীতলীকরণ কারখানা আছে।সেগুলোতে প্রতিদিন প্রায় দুই লাখ লিটার তরল দুধ সংগ্রহ করে থাকে প্রতিষ্ঠানটি। অপরদিকে ঢাকা মহানগরে প্রতিদিন প্রায় এক লাখ ৩০ হাজার থেকে ৪০ হাজার লিটার তরল দুধ বিক্রি হয়। অবশিষ্টগুলো গুঁড়োদুধসহ অন্যান্য উপকরণ তৈরিতে ব্যবহার হয়।

 

 

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০