মৌলভীবাজারে বন্যায় বেহাল সড়ক

আ ফ ম আব্দুল হাই, মৌলভীবাজার: বৃষ্টিপাত না হওয়ায় মৌলভীবাজার পৌরসভা, কুলাউড়া ও কমলগঞ্জ উপজেলায় বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে। তবে এখনও পানিবন্দি রয়েছে সদর উপজেলার কয়েকটি ইউনিয়নের মানুষ। এদিকে রাজনগর উপজেলায় বন্যার অবনতি হয়েছে। মৌলভীবাজার শহরের পানি নেমে যাওয়ায় রাস্তাঘাট, ঘরবাড়ি, স্কুল-কলেজ, মসজিদ-মন্দিরসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনার ক্ষতি স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। আঞ্চলিক মহাসড়ক থেকে শুরু করে গ্রামীণ রাস্তাঘাটে ভাঙন ও ফাটল দেখা দিয়েছে। বেশিরভাগ পাকা সড়কের পিচ উঠে গিয়ে খানাখন্দের সৃষ্টি হয়েছে।
বন্যার উন্নতি হলেও বাড়ছে মানুষের দুর্ভোগ। সবচেয়ে বেশি দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে বিশুদ্ধ পানি ও রাস্তাঘাটের জন্য। জায়গাবিশেষে বন্যার স্থায়িত্ব চার থেকে ছয় দিন অতিক্রম করলেও অনেক জায়গায় পৌঁছায়নি পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট।
জানা যায়, বাড়িঘর ও রাস্তাঘাট থেকে বন্যার পানি নামতে শুরু করেছে। শহরের বাড়ইকোনায় বড়হাটের মনু নদীর প্রতিরক্ষা বাঁধ মেরামতের প্রাথমিক কাজ শেষ হয়েছে। অন্যদিকে গতকাল বৃহস্পতিবার সকাল থেকে মনু নদের পানি বিপদসীমার এক সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে ও কুশিয়ারা নদীর পানি বিপদসীমার ৩১ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। তবে গত বুধবার রাজনগর উপজেলার কালাইরগুল কুশিয়ারা নদীর ভাঙন দেখা দেওয়ায় প্রবল বেগে উপজেলার উত্তরবাগ, ফতেহপুর ও মুন্সীবাজার ইউনিয়নসহ ২৫টি গ্রামে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে।
ত্রাণ বণ্টনে বিশৃঙ্খলা
মৌলভীবাজারে সুষম বণ্টন না থাকায় বাড়ছে ত্রাণের সংকট। যিনি পাচ্ছেন চার-পাঁচবার করে পাচ্ছেন, আর যিনি পাচ্ছেন না তিনি সাত দিনেও পাননি। অথচ ত্রাণের কোনো অভাব নেই। সরকারের পাশাপাশি শতাধিক স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ও ব্যক্তিগত উদ্যোগেও চলছে ব্যাপক ত্রাণ বিতরণ। কিন্তু সুষম বণ্টন না থাকায় ত্রাণের অভাব আছে অনেক এলাকায়।
দ্রুত নেমে যাচ্ছে বন্যার পানি। কিন্তু পর্যাপ্ত ত্রাণ থাকার পরেও বণ্টনে অব্যবস্থাপনার কারণে সবার কাছে ত্রাণ পৌঁছায়নি। আবার শহর ও শহরতলির পাশে এবং যে এলাকায় যোগাযোগ ব্যবস্থা ভালো সেসব একালায় কেউ কেউ চার-পাঁচবার করেও ত্রাণ পাচ্ছেন। প্রত্যন্ত এলাকা ঘুরে দেখা যায়, জেলা প্রশাসকের কার্যালয় থেকে উপজেলা প্রশাসনের হাত ঘুরে সব ইউনিয়ন চেয়ারম্যানের হাতে ত্রাণ পৌঁছালেও মাঠপর্যায়ে সব এলাকায় ত্রাণ পৌঁছায়নি।
প্রত্যন্ত এলাকার মানুষ জানান, গত সাত দিনে ত্রাণ তো দূরের কথা, কোথাও কোথাও দেখা মেলেনি জনপ্রতিনিধিদের। যোগাযোগ ব্যবস্থার দোহাই দিয়ে পানিবন্দি মানুষের কাছে ত্রাণ পৌঁছানোর অনীহার প্রমাণ পাওয়া গেছে অনেক স্থানে। অথচ বেসরকারি উদ্যোগেও অনেক জায়গায় পৌঁছেছে সহায়তা।
কমলগঞ্জ উপজেলার পতনঊষার ইউনিয়নের আবদুল হান্নান চিনু, তোয়াবুর রহমানসহ ক্ষতিগ্রস্ত অনেকেই অভিযোগ করেন, জনপ্রতিনিধিদের ধীরগতির কারণে এখন পর্যন্ত প্রত্যন্ত এলাকার লোকদের কাছে ত্রাণসামগ্রী এখনও পৌঁছেনি। কুলাউড়ার শরিফপুর ইউনিয়নের আবদুল মুহিত জানান, তার এবং আশপাশের ১০-১২টি বাড়িতে কেউ কিছু পায়নি। জেলার আদমপুর, কামারচাক, শরিফপুরসহ আরও কয়েকটি ইউনিয়নে একই অবস্থা বিরাজ করছে।
কমলগঞ্জ উপজেলার পতনঊষা ইউপি চেয়ারম্যান তৌফিক আহমেদ বাচ্চু জানান, গতকাল তিনি তিনটি ওয়ার্ডে ত্রাণ বিতরণ করেছেন, বাকিগুলোতেও করবেন। যোগাযোগ ব্যবস্থাসহ নানা সমস্যায় এখনও পৌঁছাতে পারেননি।
জেলা প্রশাসক তোফায়েল ইসলাম জানান, বন্যাদুর্গতদের জন্য প্রশাসনের পক্ষ থেকে এ পর্যন্ত ১৩ লাখ ৪০ হাজার টাকা এবং এক হাজার ১৪৩ টন চাল ত্রাণ বিতরণ করা হয়েছে। পাঁচ হাজার প্যাকেট শুকনো খাবার বিতরণ করা হয়েছে। ৬৭টি আশ্রয় কেন্দ্র খোলা হয়েছে। পুনর্বাসনের জন্য বরাদ্দ হয়েছে এক হাজার বান্ডিল টিন এবং ৩০ লাখ টাকা। এছাড়া ত্রাণের কোনো অভাব নেই। সরকার বলেছে, যত লাগবে তত দেবে। সু®ু¤ভাবে ত্রাণ বিতরণের জন্য প্রতিটি উপজেলায় একজন এডিসি ইউনিয়ন চেয়ারম্যানদের তদারকি করছেন।
উল্লেখ্য, এবার হঠাৎ বন্যায় পানিবন্দি
হয় জেলার ৩৫টি ইউপি প্রায় তিন
লাখ মানুষ।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০