মাসুম বিল্লাহ: বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন করপোরেশনের (বিআরটিসি) সেবার মান ও যাত্রী পরিবহন সক্ষমতা বাড়াতে ২০১০ সালে ৪৫০টি বাস ক্রয়ের জন্য একটি প্রকল্প নেওয়া হয়। এরই মধ্যে ৪২৮টি বাস কেনা হয়েছে, কিন্তু সেগুলো প্রত্যাশা অনুযায়ী সেবা দিতে পারছে না। নিম্নমানের উপকরণ দিয়ে তৈরি হওয়ায় বাসগুলো দ্রুত নষ্ট হচ্ছে। এমনটি উঠে এসেছে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের বাস্তবায়ন, পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগের (আইএমইডি) প্রভাব মূল্যায়ন প্রতিবেদনে।
‘প্রকিউরমেন্ট অব ডাবল ডেকার, সিঙ্গেল ডেকার এসি অ্যান্ড আর্টিকুলেটেড বাস ফর বিআরটিসি’ শীর্ষক প্রকল্পের আওতায় বাসগুলো কেনা হয়েছিল। এগুলোর বর্তমান অবস্থা বর্ণনা করতে গিয়ে আইএমইডির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে প্রকল্পটির আওতায় মোট ৪২৮টি বাস কেনা হয়। এরই মধ্যে ৪৯টি বাস অচল হয়ে পড়েছে। এগুলোর মধ্যে হালকা মেরামত দরকার ১১টির, ভারী মেরামত লাগবে ২৬টির এবং ৯টি বাস মেরামতের অযোগ্য হয়ে পড়ায় সেগুলো নিলামে বিক্রি করা হয়। আর তিনটি বাস দুর্ঘটনাকবলিত হয়েছে।
আইএমইডির পর্যবেক্ষণে দেখা গেছে, বাসগুলোর বডি খুব নিম্নমানের উপকরণ দিয়ে তৈরি। ফলে তা দ্রুত নষ্ট হয়ে যায়। আর সিঙ্গেল ডেকার, ডাবল ডেকার ও আর্টিকুলেটেড এ তিন ধরনের বাসের ছাদ দিয়ে বৃষ্টি হলেই পানি পড়ে। সিঙ্গেল ডেকার এসি বাসের এসির কার্যক্ষমতা খুবই কম হওয়ায় বাস ঠাণ্ডা হতে বেশি সময় লাগে। তাছাড়া বাসগুলোয় কিছু অপ্রয়োজনীয় যন্ত্রাংশ রয়েছে। এগুলোর কোনো দরকার হয় না বলে অন্য বাসে তা ব্যবহার করা হয় না। তাছাড়া এ যন্ত্রাংশগুলো পাওয়া দুষ্কর এবং দাম বেশি। সিঙ্গেল ডেকার ও আর্টিকুলেটেড বাসের গ্রাউন্ড ক্লিয়ারেন্স কম থাকায় এগুলো ফেরিতে ওঠা ও উঁচুনিচু জায়গা দিয়ে চলাচলের সময় ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। এছাড়া এসব বাসের পাটাতন নিম্নমানের প্লাই বোর্ড দিয়ে তৈরি, যে কারণে পানি লাগলে দ্রুত নষ্ট হয়ে যায়। আর্টিকুলেটেড বাসের জয়েন্টে কাপলিং রাবার বেলুজের দাম অনেক বেশি হওয়ায় তা বারবার পরিবর্তন করা যায় না।
বাসগুলোর আয়-ব্যয়ের হিসাব পর্যবেক্ষণ করে দেখা গেছে ডিপোগুলো বাসভিত্তিক হিসাব সংরক্ষণ করে না, কিন্তু বেসরকারি খাতে সেটি করা হয়। ফলে তাদের লাভ-ক্ষতির পূর্ণাঙ্গ হিসাব থকে। আর বিআরটিসির ক্ষেত্রে দেখা গেছে, যেসব ডিপো লাভ করছে, তারা প্রতিবছরই লাভ করছে; আর যারা লোকসান দিচ্ছে, তারা প্রতিবছরই লোকসান দিচ্ছে।
জানতে চাইলে বিআরটিসির চেয়ারম্যান ফরিদ আহমদ ভূঁইয়া শেয়ার বিজকে বলেন, আইএমইডির প্রতিবেদন এখনও আমাদের হাতে আসেনি। তবে ভারত থেকে কেনা বাসগুলোতে বেশকিছু সমস্যা রয়েছে। এছাড়া বাসগুলো নিয়মিত মেরামত করতে হয়। এতে প্রচুর অর্থ ব্যয় হয়। এজন্য নতুন বাস কেনার ক্ষেত্রে আগের চেয়ে বেশি সতর্কতা অবলম্বন করা হচ্ছে।
ভারতীয় ক্রেডিট লাইনের অর্থসহায়তা ও সরকারের নিজস্ব অর্থায়নে বাসগুলো কেনা হয়েছিল। ২০১০ সালের ডিসেম্বরে প্রকল্প গ্রহণের সময় এর ব্যয় প্রাক্কলন করা হয়েছিল ৩০৩ কোটি টাকা। পরে তা সংশোধিত হয়ে ব্যয় দাঁড়ায় ৩৮৬ কোটি টাকা। আর প্রকল্প শেষ হয় ৩৭৯ কোটি টাকা ব্যয়ে। প্রকল্প চলাকালে টাকার বিপরীতে ডলারের দাম বেড়ে যাওয়ায় ৭৫ কোটি টাকা বেশি ব্যয় হয় প্রকল্প বাস্তবায়নে।
প্রকল্পটি বাস্তবায়নে সরকারি ক্রয়বিধি (পিপিআর) ঠিকমতো অনুসরণ করা হয়নি বলে পর্যবেক্ষণে উঠে এসেছে। আর সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান বাস সরবরাহে দেরি করেছে। ২৯০টি দ্বিতল বাস সরবরাহের কথা ছিল ২০১২ সালের ২৫ এপ্রিলের মধ্যে, কিন্তু সেগুলো আসে ওই বছরের ৩১ অক্টোবর। এছাড়া ৮৮টি সিঙ্গেল ডেকার ও ৫০টি আর্টিকুলেটেড বাসও নির্ধারিত সময়ের কমপক্ষে দুই মাস পরে দেশে এসেছে।